রাত সাড়ে তিনটা। ঘরির কাটার টিক টিক শব্দ আর রুমমেটের নাকের ডাক ছাড়া আর কিছুই শুনা যায় না। ঘড়িটা একটা সময় খুব পছন্দের ছিল। স্মৃতি গিফট করেছিল। বেশ মজবুত কয়েকবার আছাড় খেয়েও থেমে যায় নি। ব্রেকাপের পরেও ঘড়ি টা আমার সাথেই রয়ে গেছে,প্রয়োজনের খাতিরে। গরীব মানুষ, আরেকটা ঘড়ি কিনে টাকা অপচয় করতে চাইনা।
রাত সাড়ে তিনটা। রোজকার মত ঘুম না আসা রাতে আমার প্রিয়ার কথা চিন্তা করে করে সবে ঘুম আসছে আসছে ভাব। চোখের পাতা তখনো খোলা, জানালায় ঠক ঠক। খুব চিন্তাই পড়ে গেছি, দিনে হোক বা রাতে চারতলার পেছন দিকের জানালা দুধরনের লোক নক করতে পারে। ১/চোর আর ২/ কোন অশরীরী শক্তি। আমার মত মানুষ এদের কাউকেই ফেইস করতে চায়না। একশ্রেণীর লোক কিন্তু চোর ফেইস করতে পছন্দ করে। আমাদের মহল্লায় এক আংকেল ছিলেন, উনি চোর পেটাতে খুব পছন্দ করতেন। অনেক দিন মহল্লায় চোর না আসলে, আফসোস করে বলতেন,আহারে অনেকদিন চোর আসেনা,ধরা পড়ে না,মারতেও পারিনা।
ঠক ঠক চলছেই,আর আমি ভাবছিই,কে হতে পারে,এক নাকি দুই। চার তালা উঠে চুরি করার মত ডেডিকেটেড চোর যদিও পাওয়া খুব কঠিন তবু মাথায় প্রথমে চোরের ব্যাপার টাই আসছে। আমি যা ভাবছি সেরকম হলে এই চোর নিশ্চয় ইমানদার। চোর হলেও ইমান ঠিক আছে। কিছু দিন আগে নিচ তালা থেকে আমার ২ লিটার মাম পানির বোতল হারিয়েছে। নতুন বোতল,পানি শেষ করে সেদিনই প্রথম পানি নিয়ে আসতে গেছিলাম। আমি মজা করে বন্ধুদের বলেছিলাম, চোর এই বোতলে যতটুকু পানি খাবে ততটুকু পানি যেন তার শরীরে ঢুকে মদ হয়ে যায় এরকম একটা মেটাবলিজম পাওয়ার তার দেহে তৈরী করে দেও আল্লাহ। তার লিভার,কিডনি সব যাতে অকেজো হয়ে যায়, চুরি করতে যেন আর সাহস না পায়। চোর সেটা শুনে নিয়েছিল হয়তো।না,খুব খারাপ লাগছে। সামান্য একটা বোতলের জন্য এত বড় অভিশাপ কেন দিতে গেলাম। আবার আফসোসও লাগছে, হায়রে হায়,আগে যদি জানতাম আমার দোয়া কবুল হবে তবে কত কিছুই না চাইতাম। জান্নাত চাইতাম, দুনিয়ার সুখ শান্তি,ভালোকাজের সক্ষমতা , পরিবারের সুস্থতা,আর চাইতাম তোমাকে। ইস,কেন যে মজা করে চোরের খারাপ চাইতে গেলাম।
-জানালায় নক চলছেই। না,এবার খুলা উচিত। আমি চোরকে আগেই মাফ করে দিয়েছি। তবু সে যখন এসেছেই,তাকে অবশ্যই সকালের চা-নাস্তার দাওয়াত দিব। যদি লিভার কিডনি সত্যিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তবে ভালো মন্দ কিছু খাওয়াবো। এরপর মাফ চেয়ে নিব। মাফ পেতে হলে আগে তার মনের মধ্যে ঢুকতে হবে। আর মনের মধ্যে ঢুকার আগে নাকি পেটের মধ্যে ঢুকা জরুরি। ভালোই হলো ঘড়ি না কিনে যে টাকা বাচিয়েছি সেটা মাফ পেতে কাজে লাগবে।
জানালা খুললাম। না কেউ নেই,তবে একটা চিরকুট রেখে গেছে। গোলাপী চিরকুট। ঠিক সেইরকম গোলাপী, যে রকম ব্যাক গ্রাউন্ডে মাই ডে লিখে শুধু প্রিয়ার সাথে কমিউনিকেট করার চেষ্টা করি। যাই হোক, চিরকুট খুলে দেখার আগে ভাবলাম, বেচারা চোর হয়ত লজ্জায় চেহারা দেখাতে চায় না। তাই হয়ত সরি লিখে দিয়ে চলে গেছে। রুমমেটরা সব ঘুমে,তাই রাতে বাতি চালিয়ে তাদের আর বিরক্ত করলাম না। সকালেই দেখা যাবে, যা আছে।
সকাল হলো। ঘুম ভাঙতেই রোজ সকালে সবার আগে, আমার দেয়া মাইডে সে সিন করেছে কিনা সেটা চেক করি। কিন্তু আজ প্রথমে চিরকুট টা খুলে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু এর পর যা হলো তা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না।
চিরকুটে লিখা
“هی پسر احمقانه
از خیال بافی دست بردار
آزمون ضربه زدن بنابراین، تمرکز بر روی مطالعه خود را”
আচ্ছা এটা কোন ভাষা? দেখতে আরবীর মত। কিন্তু ফারসি, উর্দু কিংবা হিব্রুও হইতে পারে।না,চোর তো এভাবে সরি বলতে যাবেনা। নিশ্চয় এটা কোন জ্বীন/পরীর কাজ।ওরা নিশ্চয় আরবি ফারসিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিন্তু আমি তো ছেলে মানুষ। আমার সাথে জ্বীনের কোন কাজ থাকা উচিত না। তবে কি পরী এসেছিল? প্রেম নিবেদন করে কিছু লিখেছি কি? লিখতেই পারে,আমি যথেষ্ট সুদর্শন। অবশ্য লাভ নেই,আমি তো একটা মানুষ কে পছন্দ করি। তাকেই বিয়ে করতে চাই। সব সুদর্শন বালক মেয়েদের সাথে গাদ্দারী করবে এটা নিশ্চয় জরুরি নয়? আচ্ছা!আমার প্রিয়া কি কোন ভাবে কিছু লিখে পাঠিয়েছে। সে তো আবার মাল্টিট্যালেন্টেড রমণী। আল্লাহ তাকে অনেক গুন দিয়েছে। সে ভালো পড়ে, ভালো লিখে, ভালো লেকচার তুলে, ভালো হাসে, আরবিও জানে হয়ত। তার মায়াবী হাসির গুনে কোন জ্বীনকে বশ মানিয়েছে হয়ত আমার সাথে কমিউনিকেট করার জন্য। হ্যা,সম্ভাবনা আছে। আমাকে জানতেই হবে কি আছে এই চিরকুটে।
-নিচ তালায়,ফরেইনার ব্লকে নতুন এক ভাই এসেছে, ফিলিস্তিন। ভাইকে নক দিয়ে,ছবি তুলে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,এর অর্থ কি? ভাই রিপ্লাই দিলো এটা আরবী বা হিব্রু না। অন্য কোন ভাষা, উর্দু বা ফারসি। স্কুল-কলেজে কিছু উর্দুভাষী বন্ধু ছিলো ওদের একজন কে ছবিতুলে পাঠিয়ে অর্থ জানতে চাইলাম। না, সেও বললো এটা উর্দু না। ফারসি হইতে পারে। আমি এখন ইরানী লোকজন কই পাই?
-অনেক খুজাখুজির পর ঢাকা ইউনিভার্সিটির এক ভাইয়ের বান্ধবীকে পাইলাম। আপুকেও ছবি তুলে পাঠালাম। চিরকুটের অর্থ খুজে বের করতেই হবে। কোন দিন ফিরে না তাকানো রমণী আমাকে কি বার্তা দিয়েছে তা আমাকে জানতেই হবে।
-আবার রাত হলো। আমিও মশারীর ভেতরে ঘুম না আসা রাতে তার কথা ভাবতেছি। এমন সময় আপুর রিপ্লাই এলো। আহা,আপুর রিপ্লাই পেয়ে এমন ফিল হলো যেন মনে হলো আমার রমণী বিয়ের প্রোপোজাল পাঠিয়েছে। অকে চিরকুট রহস্য শেষ করতে হবে এবার।ম্যাসেজ খুলে দেখি আপু ইংলিশ কনভারসন পাঠিয়েছেন।
“Hey foolish boy,
stop dreaming,
exam is knocking so concentrate on your study”
রাতে এক বন্ধুর চার্জার নিয়ে আসছিলাম। শালা সকাল বেলা চার্জার ফেরত নিতে আসছে,দরজায় বাড়ি দিয়া দিছে ঘুম ভাঙাইয়া। নয়ত এর পর এক্সামের চিন্তায়,পড়তে লাইব্রেরি যাইতাম, হয়ত রমণীও থাকতো, হয়ত আমার দিকে ফিরে তাকাতো, হয়ত স্বপ্নেই কোন এক স্বপ্ন পূরন হতো।