শীতকাল কম-বেশি আমাদের সবারই পছন্দ। তবে শীতে তাপমাত্রা আবার বেশি কমে গেলে তা কষ্টের কারণও বটে!
শীতকালে আমাদের দেশের তাপমাত্রা অনেক সময় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও নিচে নেমে যায়। কিন্তু তা হয়তো কখনোই শূন্যের নিচে চলে যায় না। তবে গড়ে এই ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই আমরা রীতিমতো কুঁকড়ে যাই।
ধরুন এখন যদি আপনাকে এমন কিছু দেশের কথা বলা হয় যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ এর নিচে, তাহলে? সম্ভবত তাহলেই সত্যিকারের ঠান্ডা কী, সেটা টের পাবেন আপনি।
চলুন এবার দেখে নিন পৃথিবীর এমন কিছু দেশ, যেখানকার শীতল আবহাওয়ার কথা মাথায় আসলেই আপনার শীত অনুভব করতে শুরু করবেন।
অ্যান্টার্টিকা
পৃথিবীর সব থেকে শীতলতম দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে অ্যান্টার্টিকা উপমহাদেশ। সারা বছরই সূর্যের টিকিই দেখতে পাওয়া যায় না এই দেশে। অ্যান্টার্টিকার তাপমাত্রা এতই কম যে, সেখানে কোনো মানুষ বসবাস করতে পারে না। স্বাভাবিক অবস্থায় এখানকার তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৮৩ ডিগ্রির নিচে।
এখন পর্যন্ত এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাশিয়া
শীতপ্রধান দেশ হিসেবে রাশিয়া অন্যতম। রাশিয়া হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম জনসংখ্যা সংবলিত সবচেয়ে ঠান্ডা দেশ। মাত্র ২ মাসের জন্য সূর্যের মুখ দেখতে পাওয়া যায় এই দেশে। যেখানে গরমকালে তাপমাত্রা থাকে -৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ দেশে গরমকাল বলে কোনো ঋতু নেই বললেই চলে।
সাধারণত এ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৭ থেকে মাইনাস ৮ ডিগ্রির মধ্যে। শীতকালে রাশিয়ার তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় মাইনাস ২৭ ডিগ্রিতে, যা মানুষের বসবাসের জন্য কোনোভাবেই সহনীয় নয়। এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৭১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কানাডা
সারা বছরই এই দেশে তীর্যকভাবে আলো দেয় সূর্য। বছরের পাঁচটি মাসই শীতকাল অনুভূত হয় কানাডাতে। তাই বিশের অন্যতম শীতপ্রধান দেশ হিসেবে খ্যাত কানাডা। এ দেশের তাপমাত্রা সাধারণত মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ৩৯ ডিগ্রির ভেতরেই থাকে। বুঝতেই পারছেন এ দেশের শীতের প্রকোপ কতটা নির্মম।
এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কাজাখস্তান
সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে এমন দেশের মধ্যে একটি কাজাখস্তান। এ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির মুখোমুখি হয় তা হচ্ছে, তুষারপাত। এ দেশে প্রচুর তুষারপাত হয়। গরমকালেও এ দেশের অধিকাংশ জায়গা থাকে বরফাচ্ছন্ন। তবে গরমকালেও এই তাপমাত্রার খুব একটা হের ফের না হলেও শীতের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতেই থাকেন মানুষ।
আমেরিকা
অন্যান্য শীতপ্রধান দেশের তুলনায় এ দেশে তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যা একটু বেশি। আমেরিকা জুড়ে সমান শীত না পড়লেও সব অঞ্চলেই শীতের প্রকোপ মারাত্মক।
উত্তর আমেরিকাতে সব থেকে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়। এই দেশের গড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমেরিকার সব থেকে শীতলতম স্থান হল আলাস্কা। এর তাপমাত্রা মাঝে মাঝে নেমে যায় মাইনাস ৬২ ডিগ্রির নিচে। এ তাপমাত্রায় কোনো মানুষ বসবাস করতে পারে না।
আইসল্যান্ড
নাম শুনেই ধারণা করা যায় এটি বরফের দেশ। আসলেই তাই, এটি বরফের দেশ। এই দেশের আবার দুই মেরুতে দু ধরনের আবহাওয়া অনুভূত হয়। দেশের দক্ষিণ দিকের তুলনায় উত্তর দিকে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। কখনও তাপমাত্রা নেমে -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে যায়।
গ্রিনল্যান্ড
পৃথিবীর সব থেকে বড় দ্বীপ হল গ্রিনল্যান্ড। সূর্যের আলো এই দ্বীপে প্রায় আসে না বললেই চলে। বছরের প্রতিটা মাসই বরফ দিয়েই ঢাকা থাকে এই দ্বীপ।
এ দেশের তাপমাত্রা সব সময়ই থাকে খুব কম। এ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৭ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন মাইনাস ৯ ডিগ্রি। এ দেশের সব জায়গায়ই সারা বছর হালকা বরফের আস্তরণ জমে থাকে, যার ফলে এখানে সূর্যের আলোও কোনো প্রকার তাপ দিতে ব্যর্থ হয়।
ফিনল্যান্ড
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সব থেকে শীতলতম দেশ হল ফিনল্যান্ড। এ দেশটি বছরের মধ্যে চার মাসই তুষারে ঢাকা থাকে। শীতকালে এই দেশের তাপমাত্রা থাকে ০ ডিগ্রি থেকে -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও খুব যে সহনীয় মাত্রায় যায় তা কিন্তু নয়। ঘুরেফিরে এ দেশের তাপমাত্রাও থাকে বরফবিন্দুর কাছাকাছি। ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে ঠান্ডা অঞ্চল হচ্ছে ল্যাপল্যান্ড। এ অঞ্চলে তাপমাত্রা তো সর্বনিম্ন হয়ই, এর সঙ্গে যুক্ত হয় তীব্র ঠান্ডা বাতাস; যা মুহূর্তেই আপনাকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।
এস্টনিয়া
ফিনল্যান্ড এবং বাল্টিক সি-এর মাঝখানে অবস্থিত আরেকটি শীতপ্রধান দেশ এস্টনিয়া। এ অঞ্চলে শীতকালেই যে শুধু ঠান্ডা থাকে তা কিন্তু নয়, বরং বছরের ১২ মাসই থাকে তীব্র শীত। শীতের পরিমাণ এতই যে, এখানে বাস করাটাও বেশ কঠিন।
যে কোনো সময়ই যে কোনো জায়গায় তুষারপাত হতে পারে এ দেশে এবং এ জন্য শীতকালের অপেক্ষা করতে হয় না। বর্ষা এই দেশে প্রায় নেই বললেই চলে। খুব কম বৃষ্টিপাত হয়ে এই দেশে।
মঙ্গোলিয়া
মধ্য এশিয়ার একটি দেশ হল মঙ্গোলিয়া। মঙ্গোলিয়ায় শীতের পরিমাণ খুব একটা কম নয়। গরমকালে এই দেশের তাপমাত্রা থাকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভেবে দেখুন গরমকালেই এই তাপমাত্রা। তবে শীতকালে কখনও তাপমাত্রা নেমে -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও চলে যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান কোনটি?
প্রশ্ন হতে পারে, পৃথিবীর শীতলতম স্থানটি কোথায়—তবে এ প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নিশ্চিতভাবেই অ্যান্টার্কটিকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী টেড স্ক্যামবস ২০১৩ সালে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বার্ষিক এক সভায় বলেন, সবচেয়ে ঠান্ডা ওই স্থানের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৯৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর সে জায়গাটির অবস্থান ইস্ট অ্যান্টার্কটিক মালভূমির দুই শীর্ষভাগ ‘ডোম আরগাস’ ও ‘ডোম ফুজির’ মাঝামাঝি বরফাবৃত একটি উঁচু স্থানের কাছে। বিজ্ঞানীদের মতে, তাঁরা দক্ষিণ গোলার্ধের এযাবৎকালের সর্বনিম্ন যে তাপমাত্রা ২০১০ সালের ১০ আগস্ট রেকর্ড করেছেন, তা উত্তর গোলার্ধের আলাস্কা বা সাইবেরিয়া অঞ্চলে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও ৫০ ডিগ্রি কম।
লাইভসায়েন্স।
বিশ্বের সবচেয়ে গরম স্থান কোনটি?
এখন স্বাভাবিক একটি প্রশ্ন হতেই পারে তাহলে সবচেয়ে গরম স্থানই বা কোনটি ? সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক।
১৯৯৩ সালের ১০ জুলাই থেকে রেকর্ডটা যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের দখলে। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এই জায়গাটিতে সর্বোচ তাপমাত্রা ছিল ৫৬ দশমিক ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস!